গাংনীতে মালয়েশিয়া প্রবাসী মঈনুদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি

সুজন মাহমুদ
সুজন মাহমুদ
4 Min Read

গাংনীতে মালয়েশিয়া প্রবাসী মঈনুদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরের গাংনীতে মালয়েশিয়া প্রবাসী মঈনুদ্দিন দেশে ফেরার প্রায় ২ মাস পর হঠাৎ মৃত্যুতে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে তার স্ত্রী জুলেখা হত্যা করে স্ট্রোক এর কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মঈনুদ্দিনের পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসীর অনেকে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট), সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে গাংনী উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের হেমায়েতপুর গ্রামের রাজারপুর নিজ বাসভবনে মারা যায় মঈনুদ্দিন (৪৮) নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসী। তিনি হেমায়েতপুর গ্রামের মৃত জামাত আলীর ছেলে। মঈনুদ্দিন দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত মালয়েশিয়া অবস্থানের পর গত ২ মাস পূর্বে দেশে ফেরেন। বুধবার সন্ধায় তার বুকে ব্যথা উঠলে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তাকে বিষাক্ত পদার্থ খাইয়ে তার স্ত্রী হত্যা করেছেন, কেউ বলছেন গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, কেউ আবার বলছেন মেরে ফেলেছে কিন্তু কিভাবে মেরে ফেলেছেন তা জানেন না। এমন অনেক অভিযােগ উঠেছে স্বামীর মৃত্যু নিয়ে স্ত্রী জুলেখার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় অনেকে জানান, মঈনুদ্দিন প্রায় ১৮ বছর পূর্বে কর্মের তাগিদে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর গত ৫ বছর পূর্বে ছুটিতে বাড়ি আসেন। উক্ত সময় হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে মুখে লালা (ফাপড়) কাটতে থাকে। পরে সুস্থ্য হয়ে আবারও মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। সেসময় নাকি তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় যার কারণে সে বাঁচার তাগিদে মালয়েশিয়া পালিয়ে যায়।
অবশেষে গত ২ মাস পূর্বে আবারও দেশে ফেরেন মঈনুদ্দিন এবং বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ্য হলে প্রতিবেশীদের খবর দিলে তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান। গ্রামের অনেকেই বলেন, এবারও তাকে সেভাবেই মারার পরিকল্পনা করা হয় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তার মৃত্যু ঘটে। স্বামী বিদেশ যাবার পর এলাকার কোন একজনের সাথে জুলেখা পরকীয়া করে এমনটিও বলেন তারা। বাড়ির সম্পত্তিও সকলকে ফাঁকি দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন। এর পূর্বে মঈনুদ্দিনের মাকেও জুলেখা মেরে ফেলেছেন বলে অভিযোগ তোলেন অনেকে। সর্বশেষ জুলেখাই মঈনুদ্দিন কে মেরে ফেলেছে বলে জানান।
এদিকে মঈনুদ্দিনের শালিকা জানালেন, গতকাল দুলাভাই আমাকে ফোন করে জানায়, তিনি অসুস্থ্য এবং অসুস্থতার কারণেই তিনি মারা গেছেন। বিশ্বাস না হলে ফোন কল চেক করার কথাও জানান।
মঈনুদ্দিনের মেয়ে ইরাণী জানান, আমি অসুস্থ্য রয়েছি, শরীরে স্যালাইন চলছে। সকালে বাবা অসুস্থ্য হলে মা আমাকে ডেকে পাঠান। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়নি। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তাছাড়া তিনার শরীরে কয়েকটি জটিল রােগও ছিল।
তবে মঈনুদ্দিনের স্ত্রী জুলেখা বলেন, ভালো থাকলে মানুষের হিংসা হয়। একটু ভালো থাকতে দেখে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন সকলে। আমার স্বামী অসুস্থ্য হলে বুকে তৈল দ্বারা মালিশ করে দিই। এসময় বেশি অসুস্থ্য হলে স্থানীয় লোকজনদের জানায় এবং হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। যা অনেকেই অবগত রয়েছেন। অবশ্য কয়েকজন জানেন বলেও সে সময় প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
মঈনুদ্দিনের মৃত্যুর খবরে স্থানীয় হেমায়েতপুর পুলিশ ক্যাম্পের একটিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং নিহতের শরীরে কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করেন। এবং লাশ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। ময়না তদন্তের রিপোর্টে তেমন কিছু প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share This Article