মেহেরপুরে ড. শহীদ সামসুজ্জো পার্ক এখন খোঁয়াড়

Tozammel Azam
Tozammel Azam
4 Min Read

আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আক্রমনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন। সেদিনই মেহেরপুর নগর উদ্যানের নামকরণ হয় ড. সামসুজ্জোহা পার্ক। মেহেরপুর জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সেই সামসুজ্জোহা পার্ক বুধবার রাত থেকে গরুর খোঁয়াড় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে পৌরসভা। শহরের পরিবেশ নষ্টকরা ২৫টি গরু পৌর কর্মচারীরা বুধবার রাতে আটক করে ওই পার্কে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এই পর্কের পূর্বদিকের একদিকে শহীদ মিনার, অরেকদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, মাঝে মফিজুর রহমান মুক্তমঞ্চ। আটকে রাখা গরু পার্কের মধ্যে মলমুত্র ত্যাগ করে সেখানকার পবিত্রতা নষ্ট করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পশু
মালিকরা তাদের পশু ছাড়াতে আসেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায় পার্কের মধ্যে একদল বিভিন্ন বয়সের গরুর অবাধ বিচরণ। দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে পার্কের এদিক সেদিক। পার্কে আটক থাকা গরুগুলো দিনে রাতে অবাধে শহরে বিচরণ করতো। গত চারবছর ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়াতে আটক পশুর মালিকেরা তাদের গৃহপালিত গরু শহরে ছেড়ে পালন করে আসছে। ফলে পরিবেশ নস্টের সাথে প্রতিদিনই শহরের যান ও পথচারীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছিলো। বিভিন্ন সময়ে পৌর সাউন্ড সিস্টেমে, মাইকিং করে নিজ নিজ বাড়িতে পালন করার জন্য মেয়র অনুরোধ জানায়। ক্ষমতাসীন দলের একপক্ষের সমর্থনে পশু মালিকরা পশু ছেড়ে পালন করাতে ক্ষমতাসীন দলের দুইপক্ষের মধ্যে ক্ষমতার বড়ায় দেখেছে পৌরবাসী। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বিভিন্ন সমাবেশে শহরে সারারাত গরুর চলাচলকে জেলার আইন শৃঙ্খলা চরম ভালো বলে গর্ববোধও করেছেন।


খোঁয়াড় হচ্ছে জমির ফসল অথবা বসতবাড়ির বাগান বিনষ্টকারী গবাদিপশু আটক রাখার গারদ বিশেষ। ফসল বিনাশ করার আশঙ্কা রয়েছে, এমন অবাধে বিচরণকারী গবাদিপশুও খোঁয়াড়ে আটকরাখার বিধান রয়েছে।
একসময় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের নিয়ে খোঁয়াড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হতো। আবার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খোঁয়াড় ডেকে নেয়া হতো। যাদের ফসল নস্ট করতো তারা পশু ধরে খোঁয়াড়ে দিতেন। খোঁয়াড়ের ব্যবস্থাপক খোঁয়াড়ে আটক গবাদিপশু ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পশুর মালিককে খবর পাঠাতেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রবীণ ব্যক্তিদের ধার্য করা জরিমানা দিয়ে মালিক তাঁর গবাদিপশু ছাড়িয়ে নিতে পারতেন। এখনও ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে খোঁয়াড় পদ্ধতি চালু আছে। তবে খোঁয়াড় বর্তমানে অনেকটা বিলুপ্তির পথে। সমাজকর্মী মাহবুবুল হক মন্টু খোঁয়াড় প্রসঙ্গে বলেছেন, মোগল আমলে যখন সরকারি আয়ের প্রধান উৎস ছিল কৃষি, তখন জমির ফসল রক্ষার ক্ষেত্রে এই খোঁয়াড় পদ্ধতি বিশেষ গুরুত্ব ছিলো।
মেহেরপুর বড় বাজারের সবজি বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ জানান- একসময় সমাজকে অনেকে পশু দান করতো। সেসব পশুর অবাধ বিচরণ ছিলো। মানুষের জমির ফসল খেয়ে বড় হতো। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা সেই পশু বিক্রি করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করতেন।

কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ছেড়ে দিয়ে পালনকরা পশু তাদের প্রতিষ্ঠানে বিক্রির জন্য রাখা সবজি খেয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে। পৌরসভায় অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি।
মেহেরপুর পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন জানান- বিভিন্নভাবে পশু মালিকদেরও গরু বাড়িতে বেঁধে পালন করার জন্য বলা হয়েছে। দলের একটি পক্ষের সমর্থনে গবাদিপশু শহরে ছেড়ে দিয়ে পালন করা বন্ধ করা যায়নি। ফলে শহরে বিচরণকারী গবাদিপশুর গোবর পরিবেশ নষ্ট করছে। শিশুরা নির্ভয়ে চলাচল করতে পারছে না। যান ও পথচারীদেরও চলাচল ব্যহত হয়। বাধ্য হয়ে এবার পার্কটিকে খোঁয়াড় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শহরের আর পশু ছাড়বেনা এমন শর্তে মুচলেকা না দিলে পশু ছাড়া হবে না।

Share This Article