মেহেরপুরে শ্যালকের ক্ষমতার দাপটে ভগ্নিপতির চলাচলে ভোগান্তি
মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনীতে শ্যালক নজরুল ইসলাম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার বাড়ির পানি ছেড়ে ভগ্নিপতি মশিউর রহমানের চলাচলের রাস্তা কর্দমাক্ত করে ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সহড়াতলা গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার মশিউর রহমান জানান, একই গ্রামের পাশের বাড়ির তার শ্যালক নজরুল ইসলাম বাড়িতে ট্যাঙ্কি কিংবা গর্ত খুঁড়ে পানি সংরক্ষণের জায়গা থাকা সত্ত্বেও ২ টি পরিবারের সদস্যসহ আশেপাশের লোকজনের চলাচলের একমাত্র কাঁচা সড়কটি কারণে অকারণে মটরের পানি ছেড়ে কাদা সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। গত ৩ সপ্তাহ ধরে এসড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
রোববার (১৩ অক্টোবর), বিকেলের দিকে সরেজমিনে সহড়াতলা গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ায় গিয়ে কর্দমাক্ত সড়কের দৃশ্য চোখে মেলে।
ভুক্তভোগী মশিউর রহমান জানান, সড়ক কর্দমাক্ত হওয়ায় নিজের অটোভ্যান তো দূরের কথা, মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি ছেড়ে কর্দমাক্ত করায় গত ৩ সপ্তাহ ধরে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে উক্ত মহল্লার লোকজন।
শ্যালক নজরুলকে বাড়ির ব্যবহৃত পানি বিকল্প যায়গায় আটকে রাখা কিংবা পাইপলাইনে অন্যত্র স্থানান্তরে কয়েকবার বলা হলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ছাড়াও দলীয় প্রভাব দেখিয়ে মারধর করতে তেড়ে আসে।
ইতিপূর্বে তিনাদের বাড়ি নির্মাণেও নিজ জমির সীমানা ছাড়িয়ে ২/৩ হাত জমি দখল করা হয়েছে আমার। সে সময় আমি প্রবাসে অবস্থান করলে আমার স্ত্রী ফেরদৌসী বাঁধা প্রদান করলে তাকে মারধর করা হয়েছে। এমনকি আমি দেশে ফিরলে বাড়ির সামনে দখলকৃত জমি পুষিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান ফেরদৌসীর ভাই নজরুল ইসলাম। কিন্তু সে জমি পুষিয়ে না দিয়ে বরং চলাচলের সড়কে কর্দমাক্ত করাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকী-ধামকী অব্যাহত রেখেছে। কাদার মধ্যে গাড়ি আনতে গেলে তাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও টিনে একটু ছোঁয়া লাগলেও মারতে তেড়ে আসে বজলুল, নজরুল, নিহাজ ও নজরুলের ছেলে একলাচ।
মশিউরের ছেলে নাজমুল জানান, আমার নানা তাহের আলী বাড়ির সীমানা থেকে মেইন সড়কে শরীকানাদের চলাচলের জন্য ১ শতক জমি রাখলেও নজরুল ও তার ভাই বজলুল তা মানতে নারাজ।
এবিষয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করা হলেও নজরুল ইসলাম কারো কথা মানতে রাজি হননি বলে এলাকাবাসী সূত্র জানায়।
সড়কে পানি ছেড়ে কর্দমাক্ত করে জনদুর্ভোগ কেন সৃষ্টি করছেন এমন প্রশ্নে নজরুল ইসলাম জানান, আমরা যেমন বাড়ির পাশে চলাচলের যায়গা ফেলে রেখেছি তেমনি ভাবে মশিউরকেও তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে চলাচলের যায়গা রাখতে হবে। যদিও চলাচলের জন্য সীমিত যায়গা সেখানে দেখা গেছে। এসময় মশিউর কর্তৃক র্যাব-১২ সিপিসি-৩ মেহেরপুরের গাংনীস্থ ক্যাম্পে মৌখিক অভিযোগের কথা হলে নজরুল অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন র্যাব ও জেলা প্রশাসক, মেহেরপুরের বিরুদ্ধে। যা সাংবাদিকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
নজরুল ইসলাম জানান, গত ১৭ বছর ধরে বহুত জ্বালিয়েছে মশিউর। আর নয় এখন আইনের আশ্রয়ে যাক দেখি কে কি করে। কথা হচ্ছে মশিউর তো প্রবাসে ছিল তবে ১৭ বছর ধরে কিভাবে জ্বালিয়েছে! এমন প্রশ্ন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তির।
নজরুল ইসলামের ছেলে একলাচ জানান, আমরা যেভাবে বাড়ির পাশে চলাচলের যায়গা ফেলে রেখেছি একইভাবে মশিউরকেও তার সীমানা প্রাচীর ভেঙে চলাচলের যায়গা দিতে হবে। অন্যথায় এমনিভাবেই চলবে। ও যা পারে করুক।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি সমাধানে এগিয়ে আসলেও নজরুল ইসলাম কোনভাবেই তা সমাধান করবেনা বলে জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম লাটুর কাছে বিষয়টি নিয়ে ফোন কলে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্বন্ধে আমি অবগত রয়েছি। ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত লোকজন জোর-জুলুম করে বাড়ি থেকে বাইরে আসার রাস্তায় পানি দিয়ে কর্দমাক্ত করছে। আমার কথা মানবে না ওরা। তাই বিষয়টি নিয়ে সমাধানে যায়নি।
ঘটনায় ভুক্তভোগী মশিউর সর্বশেষে জানান, নজরুল ইসলাম বিএনপি সমর্থিত। আর আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে তাদের অত্যাচার। র্যাবের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানানো হয়েছে। রাস্তায় পানি ছেড়ে কর্দমাক্ত করা থেকে বিরত না হলে গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও জানান ভুক্তভোগী মশিউর।