মেহেরপুরে বারোমাসি আমচাষে সফলতা

ভয়েস অব মেহেরপুর প্রতিবেদন
ভয়েস অব মেহেরপুর প্রতিবেদন
3 Min Read
বারোমাসি আম চাষ করে সফল বুলবুল

আমচাষের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আর সুস্বাদু আমের জেলা মেহেরপুর। মেহেরপুরের হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই আম স্বাদের দিক দিয়ে দেশের বাইরে ইউরোপিয় অঞ্চলে তার মাহাত্ম ছড়িয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। এবার মেহেরপুর জেলায় এক নতুন জাতের বারমাসি আমের চাষ শুরু হয়েছে। বারোমাসি থাই জাতের এই আমটির নাম ‘কাটিমন’। ইউটিউব দেখে উৎসাহী হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের সমাজকর্মি মঈন-উল-আলম ওরফে বুলবুল। আমঝুপি বিএডিসি বীজ উৎপাদন খামারের পাশেই ২৪০টি আম গাছের বাগান গড়েন ২০২১ খ্রিস্টাব্দে। সেসব গাছে গাছে মুকুল আর ডালে ডালে ঝুলছে থোকা থোকা আম। তার বাগানের গাছের আম কোনটি ডাকর হয়েছে। কোনটি গুটি আবার কোন ডালে মুকুল। ডাকর আমের রং দেখলেই জিভে পানি আসবে। অসময়ে এই আমচাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে সারাবছরই আমের স্বাদ পাবে মানুষ। তখন বছরজুড়ে হবে আমের মৌসুম।

কৃষিবিদরা আশা করছেন- আগামী একদশকে এই আম সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে। আমচাষী মঈন-উল-আলম ওরফে বুলবুল জানান- তার বাগানের আম দেখতে এখন প্রতিদিনই আসছে জেলার বিভিন্ন গ্রামের উৎসাহী মানুষ। এ সময় অন্য জাতের আম গাছে মুকুল বা আম না থাকলেও তার গাছে আম ধরছে থোকায় থোকায়। আম পাড়তে না পাড়তেই আবারো গাছে আসছে মুকুল। গাছগুলোর এ বৈশিষ্ট্য স্থায়ী হলে দেশে আম উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ আম গাছকে বারমাসি আমগাছ বলে বর্ণনা করেছেন স্থানীয় আমচাষিরা। আমগুলোর ওজন ১ মাসেই ৩শ গ্রাম পর্যন্ত। আটি ছোট এবং আঁশবিহীন। এ আম খেতে অনেকটা হিমসাগর আমের মতো।

মেহেরপুর্বে আম চাষ
বারোমাসি আম চাষ করে সফল বুলবুল

সরেজমিনে মঈন-উল-আলম ওরফে বুলবুল এর আম বাগান ঘুরে একই গাছে কোনটি পরিপক্ক, কোনটি কাঁচা আবার কোন ডালে দেখা যাচ্ছে মুকুল। চলতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার আম বাজারজাত হয়েছে এমন বয়ান বুলবুলের। প্রতি কেজি আম পাইকারি ২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আরও ২০-২৫ মন আম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
বুলবুলের বাগানে বরোমাসি আমচাষে সফলতা দেখে আমঝুপি গ্রামের রফিকুল আলমও উৎসাহী হয়েছেন এই আমচাষে। তিনি জানান- ইতোমধ্যে তিনবিঘা জমি তৈরী করছেন আমের বাগান গড়তে। বুলবুলের সাথে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন আমের কলম নেবার জন্য।

মঈন-উল-আলম ওরফে বুলবুল বলেন- তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে ২ বিঘা জমিতে ২৪০ টি থাই কাটিমনের চারা রোপণ করছিলেন ২০২১ সালের শুরুতে। গাছ গুলোর বর্তমান বয়স মাত্র দেড় বছর। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে তিনি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। বর্তমানে তিনিও এ বাগান থেকে চারা বিক্রি করছেন। আমের ফলন ভালো হওয়ায় তিনি বাগান সম্প্রসারনের আশা করছেন।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানান, ইউটিউবে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে ২ বিঘা জমিতে কাটিমন জাতের হাইব্রিড থাই বারোমাসি আম চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন বুলবুল।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান- এটি গবেষণার মাধ্যমে চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী এক দশকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে সারাবছর আম পাওয়া যাবে। আমটি সুস্বাদু এবং বারোমাসে তিনবার আম পাওয়াতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এই বারোমাসি আমচাষে।

Share This Article