মেহেরপুরে তালপাতার পাখা এখন মানুষের ভরসা
নিজস্ব প্রতিনিধি;
চলতি ভরা বর্ষা মৌসুম জুড়েই প্রকৃতি বড়ই বিরূপ। মাঝে-মধ্যে মেঘের গর্জনে বৃষ্টিপাত হলেও মেহেরপুর জেলায় কোনভাবেই কমছে-না গরমের তীব্রতা। তার উপর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষের অস্বস্তি এখন চরমে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর গরমে তীব্রতায় ওষ্ঠাগত মানুষের এখন একমাত্র ভরসা তালপাতার বিভিন্ন প্রকারে হাতপাখা।
মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা পর্যন্ত পাখা তৈরীতে খুবই দক্ষ। এখানে তৈরী পাখাগুলো জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকে। তাছাড়া নিজেদের প্রয়োজনেও তালপাতা কেটে এলাকার মুরুব্বিরা হাতপাখা তৈরি করে থাকে। গ্রামের কিছু লোক যেমন পুরানো রেডিও ছাড়া চলতে পারেনা ঠিক তেমনি হাতপাখা ছাড়াও তাদের চলেনা। তীব্র গরমে বাঁশের মাচা কিংবা চায়ের আড্ডা যেখানেই থাক, তাদের হাতে পাখা থাকবেই। তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় পাড়া আর বাড়ি যেখানেই থাক হাতপাখাই এখন নিত্য সঙ্গী।
সম্প্রতি জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা আর গরমের তীব্রতায় জনজীবনে এক অস্বস্তিকর অবস্থা। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে গরমের তীব্রতায় প্রশান্তি জন্য এসি ও বৈদ্যুতিক পাখার উপরে অধিকাংশ মানুষ নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো-মন্দের বিষয়টি বিবেচ্য নয়। মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় সকল ধরনের মানুষ এখন পাখার উপর নির্ভরশীল।
গাংনী বাজারে পাখা বিক্রেতা জনৈক ব্যক্তি জানান, পাখা তৈরীর জন্য তালপাতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা সংগ্রহ করেন। গরমের শুরু থেকেই তারা পাখা তৈরীর কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন গ্রামের ব্যবসায়ী ও দোকানদারেরা আগাম অর্ডার দিয়ে তৈরী করে নেন তালপাতার পাখা। তিনি জানান, আমরা পাখা তৈরী করে বাইসাইকেল অথবা ভ্যানযোগে পাখা পৌঁছে দিই গন্তব্যস্থলে। তবে গত ২ বছর করোনার কারণে পাখার ব্যবসা তেমন না হলেও চলতি সিজিনে গরম পড়ার সাথে সাথে পাখার চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক বেশী।
এদিকে চলতি সিজিনে ভরা বর্ষা মৌসুমে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টিপাত হলেও কোনভাবে কমছে-না গরম। তার উপর যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। গত ৬ দিন ধরে গ্রামাঞ্চলে মধ্যরাতে বিদ্যুৎ গিয়ে তা ভোরবেলা আসে। পরে ৪০-৪৫ মিনিট থেকে আবারও চলে যায়।
গাংনী উপজেলার ধর্মচাকী নওপাড়া, মাইলমারী ও লক্ষ্ণীনারায়নপুর গ্রামের কয়েকজন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়না গ্রামে কেনো বন্ধ হয় জিজ্ঞেস করলে উত্তরে গ্রাম ও শহর এক নয় বলে জানান মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের কর্মকর্তা। সুতরাং পাখা ছাড়া চলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিরূপ আবহাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে তাপদাহে অস্বস্তিতে জনজীবন। ফলে হাট-বাজার গুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুঁটে আসছে ভুক্তভোগীরা পাখা কেনার জন্য। আগের চেয়ে পাখার মুল্য অনেকটা বেশী হলেও বেশী দামেই কিনছেন পাখা।
বামুন্দী বাজারের পাখা বিক্রেতা হারুন অর রশিদ জানান, প্রকারভেদে এখানে আগে পকেট পাখা ও ঘুরকি পাখা বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা থেকে উর্ধে ১০ টাকায়। বর্তমানে এই পাখাগুলোই ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরেও চাহিদা অনু্যায়ী পাখা সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামের কারো বাড়িতেই পাখা মজুদ নেই।
মাইলমারী গ্রামের মুদি দোকানি আজমাইন জানান, কারিগরদের আগাম অর্ডার করলেও পাখা তৈরী করতেই তিনারা হিমিশিম খাচ্ছেন। আমাকে এখন পর্যন্ত পাখা দিতে পারেননি।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, গরম বেড়ে যাওয়া ও বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে তালপাতার পাখার চাহিদা বেড়েছে বাড়িতে। বাজারেও বেড়েছে পাখার দাম।
অপরদিকে সাধারণ মানুষের মতে বিরূপ আবওয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে এক অস্বস্তিকর অবস্থা। কোথাও ঠিকমত প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন-না মানুষ। বর্তমানে গরমের তীব্রতায় নাজেহাল জনজীবন। ক্ষণিকের প্রশান্তির জন্য এখানকার তালপাতার পাখাই এখন মানুষের বড় প্রয়োজন।
তবে গতকাল সকাল থেকে কিছুটা বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা হাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে জেলার সকল ধরনের জনগণ।